Wednesday, March 11, 2009

Jewel Wins


হতে পারেন বাবা জালালউদ্দিন একজন নির্মাণ শ্রমিক। তাই বলে কি তার স্বপ্ন বা কল্পনা আকাশ ছোঁবে না? আপন অস্তিত্বের অংশ তার সন্তানকে রাজপুত্র-রাজকন্যারূপে কল্পনা করাটা কি নিছক পাগলামি? হয় তো না। কিন্তু বাস্তব যখন কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায় তখনও কি নীরবতায় সবকিছুকে পাশ কাটানো যায়? যায় না, কেন? তার প্রমাণ মিলবে যদি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ের বাড়া গ্রামে যান। গেলে দেখবেন এই গ্রামবাসী এখন উল্লাস উন্মত্ততায় জোয়ার জলের মতো ভেসে বেড়াচ্ছেন। কারণ এই গ্রামের কৃতী সন্তান জুয়েল রানা আজ একুশ শতকের প্রথম ক্ষুদে গানরাজের স্বীকৃতি পেয়েছে। কেবল এ গ্রামই নয় জুয়েল রানার বর্তমান নিবাস গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার সংলগ্ন এলাকার প্রতিটি মানুষের মুখেই এখন উচ্ছল আনন্দের ফোয়ারা। এর বাইরেও সারাদেশে চলছে প্রতিযোগিতার দর্শকের জুয়েল রানার বিজয়ী হওয়ার আনন্দ। দেশজুড়ে যখন জুয়েল রানাকে নিয়ে এতটা তোলপাড় চলছে, তখনও কি তার বাবা বা পরিবারের সবাই নিশ্চুপ? যদি বলি হ্যাঁ, তাহলে নিশ্চয় অবাক হবেন! কিন্তু যদি বলি যতটা না অবাক হয়েছেন একথা শুনে তারচেয়েও শতগুণ বেশি অবাক হয়েছে জুয়েলের পরিবারের সদস্যরা। কেননা জুয়েলের এই সাফল্য তাদের সবার কল্পনাকেই ছাড়িয়ে গেছে। তারা এটাই বিস্মিত যে এখনও তাদের মনে প্রশ্ন- একি স্বপ্ন, না বাস্তব?জুয়েলের বাবা জালাল উদ্দিন নির্মাণ শ্রমিক হলেও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। একমাত্র বোন শিউলী মাওনার এক গার্মেন্টস কর্মী বড় ভাই মেকানিক্যাল সহকারী। মূলত তারাই সংসারের ঘানি টেনে চলছেন। তার এক বোন তিন ভাইয়ের তৃতীয় জন জুয়েল পথ চলছেন সুরের টানে। দারিদ্র্যের কশাঘাতে একদিন তার বাবা পুরোপরিবার নিয়ে গফরগাঁওয়ের ভিটেমাটি ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন মাওনায়। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই জুয়েলের অভাবনীয় সাফল্য বদলে দেয় এই পরিবারের জীবন প্রবাহের গতি। এখন কথা হল মিজান মডেল একাডেমি এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র জুয়েল পারিবারিক অনটনের মাঝে সঙ্গীতের পথে পা বাড়ালো কিভাবে? এটা অনেকটা গল্পের মতো। যখন থেকে জুয়েল চারপাশকে বুঝতে ও চিনতে শুরু করেছে, তখন থেকেই সঙ্গীতের প্রতি সে দুর্বল। ক্যাসেট প্লেয়ার, রেডিও কিংবা টিভি প্রচারিত যে কোন গান তুলে নিত নিজ কণ্ঠে। চেষ্টা করত হুবহু অনুকরণ করতে। এভাবেই পথ-প্রান্তরে চলত তার গানের রেওয়াজ। যা এলাকাবাসীর নজর কাড়তে খুব একটা সময় নেয়নি। যার সুবাদে এলাকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি একদিন আমন্ত্রণ পান শ্রীপুরের জীবন্ত স্বর্গ পিকনিক স্পটে গান গাওয়ার। সেদিন সেখানে পিকনিক করছিল ঢাকা, সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাংবাদিকরা। এদিন জুয়েলের গান শুনে হতবাক হয়ে যান উপস্থিত সাংবাদিকরা, ‘এইটুকু ছেলে এমন অসাধারণ গান করে!!!’ এমন অজস প্রশংসা বাক্য বেরিয়ে আসে সাংবাদিকদের মুখ থেকে। শুধু তাই নয়, এগিয়ে আসেন দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিক মীর লিয়াকত আলী। ‘জুয়েলের মতো প্রতিভাকে ঝরে যেতে দেবেন না’ এমন প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেন জুয়েলকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার।জুয়েলকে ঢাকায় এনে শুরু তাকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টায় কয়েক মাসের চেষ্টার পর অবশেষে পথ খুঁজে পান চ্যানেল আইয়ে এসে। কারণ সে সময় চ্যানেল আই প্রথমবারের মতো সঙ্গীতের ক্ষুদে প্রতিভা অন্বেষণের আয়োজন শুরু করেছে। ঢাকা অঞ্চলের শেষ দিনের শেষ প্রতিযোগী হিসেবে অডিশনের মঞ্চে ওঠে জুয়েল। প্রাণ খুলে ছড়িয়ে দেয় সুরের সুধা। এরপর? এরপর আর কি ঢাকা অঞ্চলের অডিশন পর্বে প্রথম স্থান অর্জনের মধ্য দিয়ে পা রাখেন ক্ষুদে গানরাজের মূল মঞ্চে। তারপর ক্রমশই এগিয়ে চলা। জুয়েলের এই এগিয়ে চলার মাঝে উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগান মীর লিয়াকত আলীসহ আরও দুই সাংবাদিক। বশির আহমেদ কাজল [দিনকাল] ও এমএ মালেক [আমার দেশ]। এদের প্রেরণায় ক্রমাগত জয় করে চলেন প্রতিযোগিতার দর্শকের মন। এরপর ধাঁপে ধাঁপে এগিয়ে এসে মাথায় পরেন বিজয়ীর মুকুট। এই হল জুয়েলের সাফল্যের গল্প। কোটি হূদয়ের ভালোবাসায় সিক্ত এই গানরাজ বলেন, ‘আমার অনুভূতিটা কথায় প্রকাশ করতে পারব না। কেবল এটুকু বলতে পারি অসম্ভব ভালো লাগছে। পেশা হিসেবে সঙ্গীতকেই আঁকড়ে ধরতে চাই। কণ্ঠশিল্পীর পাশাপাশি সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। সে সঙ্গে চাই পড়াশোনার মধ্য দিয়ে দেশের একজন সুশিক্ষিত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে।’-------------------------------------------আরও কিছু খবর-------------------------------------------ছেলেটা যখন গ্রামের বাড়ি থাকতো, লেখাপড়া করতো ময়মনসিং, মিজান মডেল একাডেমি এন্ড প্রিক্যাডেট স্কুলে। তখন বন্ধুরা, গ্রামবাসী এমনকি স্কুলের শিক্ষকরাও বুঝতে পারেননি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে এমন অসাধারণ প্রতিভা। অবশ্য ছেলেটা বুঝতেও দেয়নি কাউকে। কিছুটা নীরবে-নিভৃতে গুনগুন করে নিজের অজান্তেই গাইতো গান। আর এই গুনগুনিয়ে গাওয়া গান সাধনাই যে তাকে সফলতার সুউচ্চ শিখরে নিয়ে যাবে ভাবেওনি কখনো। বলছি মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের রাজ জুয়েলের কথা। জুয়েল যখন মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদ্রে গানরাজে নাম লিখায় তখনকার জুয়েল আর আজকের জুয়েলের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ। ৮ মাস আগে শুরু হওয়া ক্ষুদে গানরাজের প্রতি পর্বেই ঘটতে থাকে নানা ঘটনা আর দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে ওরা জয় করে নেয় দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত দর্শকের মন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দেয়ার মতোই ঘটনা ঘটালো জুয়েল। ক্ষুদে গানরাজের শেষ লড়াইয়ের আগের লড়াইতে বাদ পড়ে যায় জুয়েল। জুয়েলের বাদ পড়াকে মেনে নিতে পারেনি তার অসংখ্য ভক্ত দর্শক। দর্শকের রায়ের বাণে একনিমিষেই বিচারকের রায় ভেসে গেছে। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিচারকদের কাছ থেকে জয়ের মুকুট ছিনিয়ে নিলো। আজ আমি যে মহান পুরস্কারে ভূষিত হলাম এর জন্য এর পেছনে ৩ জন সাংবাদিকের অবদানই সবচেয়ে বেশি। আজ থেকে সঙ্গীত আমার প্রাণের সঙ্গে মিশে গেলো। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সঙ্গীতকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই। বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই দেশবাসীর কাছে। তাদের দোয়া এবং ভালোবাসায়ই যেন আমাকে আজকের জুয়েলে পরিণত করেছে। ক্ষুদে গানরাজ হওয়ার পর এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো জুয়েল। গত মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি পৌঁছায় জুয়েল সেখানে তাকে নিয়ে চলছে নানা আয়োজন। গ্রামবাসী যেন আনন্দে ফেটে পড়ছে তাদের গ্রামের গর্ব এই ক্ষুদে গানরাজকে দেখে। দূর-দূরান্ত থেকে তাকে এক নজর দেখার জন্য হাজারো মানুষ ভিড় জমায় তার বাড়িতে। তার বাড়ি এখন যেন হাজার মানুষের মিলনমেলা। ফুলে ফুলে সিক্ত হচ্ছে জুয়েলের বাড়ির উঠোন। এ যেন নতুন রাজ্য জয় করা এক নতুন রাজা। জীবনের হিসেব-নিকেশ উল্টে যাওয়া এ রাজা পুরস্কার হিসেবে অটবির সৌজন্যে পাচ্ছে নগদ ৫ লাখ টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকের সৌজন্যে ১০ বছরের লেখাপাড়ার যাবতীয় ব্যয়ভার। ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেড দিচ্ছে অভিভাবকসহ ৭ দিনের কক্সবাজার ভ্রমণের সুযোগ। বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ দিচ্ছে ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত আবাসন সুবিধা ফ্রি লেখাপড়ার সুযোগ, গ্লোবাল কোম্পানি দিচ্ছে মিনি ল্যাপটপ কম্পিউটার। এ ছাড়াও পাচ্ছে এক বছরের জন্য বই খাতা পোশাক জুতা মোজাসহ যাবতীয় উপকরণ।এই ছোট বয়সে এতো বড় প্রাপ্তি যেন একটু বেশিই মনে করছেন অনেকে। তবে সঙ্গে সঙ্গে এটাও স্বীকার করছেন যে, ওদের আসলেই প্রতিভা আছে। আর ওদের এই প্রতিভা যেন সব সময়ের জন্য থাকে সেদিকে যেন বিশিষ্ট মহলের নজর থাকে। এটাই তার কাছে অসংখ্য ভক্ত দর্শকদের চাওয়া।

No comments:

Post a Comment