Tuesday, March 10, 2009

About them

Top 12
২০ প্রতিযোগীর কচি মুখ, ছোট্ট বুক। কিন' ছোট্ট সেই বুকে সাহস অসীম। এখনই তাদের দক্ষতা যেন অসামান্য। নইলে তারা কেমন করে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ভুল ধরতে বসে থাকা গুণী শিল্পীদের সামনে এগিয়ে এসে বুক ফুলিয়ে যোগ্যতার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়? নম্বর কম দিতে চাওয়া বিচারকদের হাত কাঁপিয়ে দেয়? কেমন করে বিশ্বজোড়া কোটি কোটি দর্শকের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের প্রাণে তোলে সুরের ঝংকার? এদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় প্রত্যেকের ক্ষুদে শরীরে রয়েছে অপার স্বপ্ন, জীবন অনেক দূর যাবার দৃঢ় প্রত্যয় তাদের চোখে-মুখে। অথচ এরা কেউ তাদের প্রতিভাকে ঝালিয়ে নেওয়ার সময় পেয়েছে এক বছর কেউবা সর্বোচ্চ চার বছর। আসুন ক্ষুদে এই 12 জনের সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নিয়ে আসি।

গরিব ঘরের সন্তান জুয়েল রানা। তার পিতা মোঃ জালাল উদ্দিন একজন কৃষক আর মা মোছা: হালিমা খাতুন গৃহিনী। ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি জুয়েলের ভীষণ আগ্রহ। কিন' কোন ওস্তাদের কাছে গান শেখার সুযোগ তার হয়ে ওঠেনি। মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের চতুর্থ রাউন্ডে উঠে আসা, এত চমৎকার করে গান করা তার পক্ষে কীভাবে সম্ভব হলো জানতে চাইলে জুয়েল বলে, ‘আমরা খুব গরিব তো তাই কোন ওস্তাদের কাছে আমি গান শিখতে পারিনি। তবে বাবা আমাকে একটা ক্যাসেট প্লেয়ার কিনে দিয়েছিলেন। সেটা বাজিয়ে গান শুনতাম আর সুর মিলাতাম। এভাবে গাইতে শিখেছি। সেইসব গান এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইতে গাইতে সবাই আমার নাম জেনে ফেলে। আমাদের এলাকার এক আঙ্কেল পত্রিকা দেখে এসে আমাকে ক্ষুদে গানরাজের কথা বলে। তারপর তিনিই আমার ঢাকায় যাওয়ার ব্যবস'া করে দেন।’ জুয়েল রানা শ্রীপুর, গাজীপুরের মিজান মডেল একাডেমীর ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। সে ক্ষুদে গানরাজ হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের আরেক প্রতিযোগী ঝুমা। ওর পুরো নাম ঝুম ঝুম আক্তার ঝুমা। মাতা মোসা: জেসমিন বেগম, পিতা মোঃ খুরশেদ আলম। ঝুমাও গাজীপুরের মেয়ে। সে বাস করে জয়দেবপুরের মধ্যপাড়ায়। সে সনাস অর্কেস্ট্রা একাডেমীতে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। ঝুমার বয়স ৯ বছর। ঝুমা সপ্তাহে তিনদিন অর্থাৎ শুক্র, শনি আর রবিবারে গান শেখে। বাকি চারদিন মন দিয়ে লেখাপড়া করে বলে জানায়। ওর ওস্তাদের নাম স্বপন গোস্বামী। ঝুমা কেন গান করে জানতে চাইলে বলে ‘গান আমার ভালো লাগে। তাই গান শিখি, গান করি।’ ঝুমার ইচ্ছে অন্তত প্রথম তিনজনের মধ্যে সে থাকবে শেষ পর্যন্ত।

সাবরিনা আফরিন পড়শী থাকে ঢাকার উত্তরায়। সে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। যখন নার্সারিতে ভর্তি হয়েছিল সেই সময় থেকেই সে গান শিখতে শুরু করে নানুর কাছে। বর্তমানে গান শিখছে ওস্তাদ নিয়াজ মামুনের কাছে। গানের প্রতি তার ঝোঁক আসে মা জুলিয়া এহসানকে গাইতে দেখে। তখন সে অনেক ছোট। মাকে গান গাইতে দেখে ছোট্ট পড়শীর মনে স্বপ্ন তৈরি হয়- সে একদিন অনেক বড় শিল্পী হবে। মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ তার কাছে সেই স্বপ্নের সিঁড়ি। এই সিঁড়ির সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছুতে তাই সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

খান সদ্য সমুজ্জ্বল গান শিখেছে বাবা দেলোয়ার খান রনির কাছে। মিরপুরের শাহ আলী বেনারসি কুঠির ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট কেয়ার হোমেসদ্য চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। সে নার্সারী থেকে গান শেখে। গানরাজ হতে চায় কি না জানতে চাইলে সদ্য বলে ‘চেষ্টা আছে, যতদূর যেতে পারি।

নোশিন তাবাস্‌সুম স্মরণ ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল ও কলেজ, বগুড়ার ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। মা শামীমা আরা সোমা আর বাবা মোঃ তারিকুল আলম লিখনের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই স্মরণ গান শেখে। বাবা মায়ের স্বপ্ন স্মরণ একদিন অনেক বড় শিল্পী হবে। অনেক বড় শিল্পী হওয়ার জন্য স্মরণ তাই সকালে, বিকালে, রাতে প্রতিদিন নিয়মিত গানের চর্চা করে। সে জানে অনেক চর্চা না করে গান শেখা যায় না, ভালো শিল্পী হওয়া যায় না। তাই তার চর্চার কখনো ঘাটতি হতে দেয় না সে। ওস্তাদ ইতি নিয়োগীর কাছে গান শেখে স্মরণ। তার লক্ষ্য অনেকদূর। তবে ক্ষুদে গানরাজ হতে পারাটাই তার বর্তমান লক্ষ্য।

ফুটবল খেলা ইমরান হোসেন খান তানভীরের খুবই পছন্দ। সে নিজেও খুব ভালো ফুটবল খেলে। সকালে রেওয়াজ, তারপর স্কুল, বিকালে খেলা, রাতে পড়া, পড়া শেষে আবার গানের রেওয়াজ। প্রতিদিনের রুটিন থেকে কোনটিই বাদ যায় না তার। মা লতিফা খানম খুব যত্ন করে ছেলের প্রতিটা বিষয়ে খেয়াল রাখেন। মায়ের কাছেই গান শেখে তানভীর। তানভীর মতিঝিল মডেল হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজের ষষ্ট শ্রেণীর ছাত্র। সে তার বাবা-মার আশা-আকাঙক্ষা পূরণ করবেই বলে জানায়, তার ভাষায়, ‘আমি প্রথম হব, অর্থাৎ ক্ষুদে গানরাজ হব।’

যদিও বাবা একজন গানের শিক্ষক কিন' ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না নিলয়ের। মায়ের আগ্রহে চতুর্থ শ্রেণী থেকে গান শিখতে শুরু করে সে। বাবা মাহবুবুল আলম ফিরোজের কাছেই গান শেখে সে। তার গানে উৎসাহ দেন মা হামিদা আক্তার। হামিম নিলয় টাঙ্গাইলের বিশ্বাস বেতকার সৃষ্টি একাডেমী স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। একসময় খেলাধুলা ছিল তার প্রিয় বিষয়। কিন' গত দুই বছরে গান এত আপন করে নিয়েছে যে, এখন খেলাধুলা গানের চেয়ে বেশি ভাল লাগে না। স্কুলের সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় কাটে হোম ওয়ার্ক করতে আর অবসর পেলেই বসে যায় হারমোনিয়াম নিয়ে। ক্ষুদে গানরাজ হওয়ার ব্যাপারে নিলয় দারুণ আশাবাদী।

সাবাব হোসেন কবি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। তার গান শেখার বয়সও পাঁচ বছর। প্রতিদিন সকাল আর বিকালে নিয়ম করে ওস্তাদ মোহাম্মদ আজাদুর রহমান আজাদ ও ওস্তাদ বিমল চন্দ্র মিস্ত্রীর কাছে সে গান শেখে। মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের চতুর্থ রাউন্ডে উঠতে পেরে সে দারুণ আনন্দিত। কবি ক্ষুদে গানরাজ হতে চায়। না হতে পারলেও প্রথম দশের মধ্যে থাকতে পারলেই সে খুশি।

হবিগঞ্জের মেয়ে অলকা সূত্রধর। মা অর্চনা সূত্রধর আর বাবা প্রবোধ সূত্রধর তার জীবনের আদর্শ। তাদের ইচ্ছা এবং চেষ্টাতেই অলকার গান শেখা। ওস্তাদ স্বদেশ দাসের কাছে সে সব ধরণের গানের চর্চা করে আর লালন গীতির চর্চা করে ফরিদা পারভীনের কাছে। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী অলকা ক্ষুদে গানরাজ হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আশা খাতুন আশা আরেকটি নাম প্রাপ্ত হয়েছে মেরিডিয়ান-চ্যানেলআই ক্ষুদে গানরাজ অনুষ্ঠানে এসে। তার সেই নামটি হলো ছোট্ট পরী। পরীর মতো এই মেয়েটির হাতে যখন মাইক্রোফোনের মাউথপিস থাকে তখন তাকে দেখে মনে হয় সে যেন সেটির ভার বইতে পারবে না। কিন' সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাউথপিসের ভার তো সামান্য কথা কঠিন কঠিন গান নিয়ে অসাধারণ সুরের খেলায় সবাইকে মাতাল করে দেয় ছোট এই পরীটি। আশা সুজালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। তার মায়ের নাম মোছাঃ আমেনা খাতুন, বাবার নাম মোঃ আবুল কাশেম। আশাকে নিয়ে তাদের অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন। কিন' আশার স্বপ্ন সে মঞ্চে গান গাইতে পারছে, পারবে এটুকুই। আশা দুই বছর ধরে গান শিখছে ওস্তাদ কাজী গোলাম আকবর আলী মিন্টুর কাছে।

শাহাবুদ্দীন সাজ্জাদ উদয় গান শিখবে, অনেক বড় নামী মানুষ হবে- তার মা শামিমা সুলতানা আর বাবা গোলাম সরোয়ার চেয়ারম্যানের ইচ্ছে। উদয় পড়াশুনা করছে মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার চিতলা হাইস্কুলের প্রথম শ্রেণীতে। সে বলে ‘আমি আমার বাবা মাকে খুব ভালোবাসি। বাবা মায়ের ইচ্ছেতেই আমি গান করি সেই ক্লাস ওয়ান থেকে। বড় ভাইয়ের কাছে গানের হাতেখড়ি হলেও বর্তমানে ওস্তাদ শেখ আলাউল হক ও ওস্তাদ নান্টু সরকারের কাছে গান শিখছি। তাদের সবার ইচ্ছে পূরণ করতেই আমি ক্ষুদে গানরাজ হব।’

জারিন তাসনিম তুবা চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। সে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের উদয় কিন্ডার গার্টেন স্কুলে পড়ে। গান গাইতে তুবার খুব ভালো লাগে তাই সে গান করে। যখন তুবা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে তখন থেকে সে গান শেখে ওস্তাদ বায়েজিদ হোসেনের কাছে। ক্ষুদে গানরাজ হবে বলে তার অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। কারণ সে জানে যে, সে খুব ভালো গান করে। কেমন করে জানে- জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ‘কেনো, সবাই বলে আমি খুব ভালো গান করি।’

No comments:

Post a Comment